images

মার্কিন তালিম নিয়ে মেয়র দেশে ফিরলে মশক নিধনে নতুন সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ

২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র দেশে ফিরলে মশক নিধনের ক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তন বা সমন্বয় করবে সংস্থাটি। তবে এখন ডিএনসিসির মশক নিধনের কাজ প্রচলিত পদ্ধতিতেই চলছে। সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

ঢাকা শহরে মশক নিধনে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হয়, তা ভুল পদ্ধতি বলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের উপলব্ধির বিষয়টি গত শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় সংস্থার জনসংযোগ বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরে গিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম দেখে তাঁর এ উপলব্ধি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি কর্মসূচির আওতায় এখন দেশটি সফর করছে ডিএনসিসির একটি প্রতিনিধিদল। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তাঁকে উদ্ধৃত করে ডিএনসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা এত দিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি; বরং অর্থের অপচয় হয়েছে।’

মেয়রের এমন উপলব্ধির পর ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ মশক নিধনের পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন আনল কি না, তা জানতে গতকাল সোমবার বিকেলে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমানের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মেয়র সেখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) পরিদর্শন করছেন, দেখছেন। তিনি অনেক নতুন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আসবেন। দেশে ফিরে সেই অভিজ্ঞতা তিনি আমাদের জানাবেন। তখন সেগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমন্বয় করা হবে। তবে এখনই সেসব বিষয়ে নির্দিষ্ট করে গণমাধ্যমে কিছু বলার মতো সময় আসেনি।’

ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মশার লার্ভা নিধনে প্রতিদিন সকালে দুটি ওষুধ ব্যবহার করে লার্ভিসাইডিং করা হয়। ওষুধগুলো হচ্ছে টেমিফস ও ম্যালেরিয়া ওয়েল-বি।

টেমিফস ১৫ মিলিলিটার পরিমাণে ১০ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছিটানো হয়। প্রত্যেক মশককর্মীর কাছে ৬০ মিলিলিটার পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হয়। একজন কর্মী তা চারবার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্রে (স্প্রে মেশিন) পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করেন।

ম্যালেরিয়া ওয়েল-বি ছিটানো হয় সরাসরি, তবে প্রয়োজন অনুযায়ী। সাধারণত, যেখানে পানির পরিমাণ বেশি, সেখানে ওষুধটি ছিটানো হয়। যেখানে প্রাকৃতিকভাবে মশক নিধনের জন্য গাপ্পি মাছ ছাড়া আছে, সেখানে ছিটানো হয় না। এ ওষুধ প্রয়োগে মশা ডিম পাড়তে পারে না। আর লার্ভা থাকলে নিশ্বাস নিতে না পেরে মারা যায়।

পানির সঙ্গে ধীরে ধীরে দ্রবীভূত হয়—এমন ওষুধ নোভালিউরন ট্যাবলেটও ব্যবহার করে ডিএনসিসি। এই ওষুধ বাসাবাড়ির ওয়াসার পানির মিটারের বক্সে বা চৌবাচ্চার মতো আবদ্ধ জায়গায় ব্যবহার করা হয়। এতে মশার ডিম লার্ভা হতে পারে না। আর যদি লার্ভা থাকে, তা পিউপায় কিংবা পিউপা থাকলে তা পরিপক্ব মশায় পরিণত হতে পারে না।

বিকেলে ফগিং বা ধোঁয়া দিয়ে মশক নিধনের কাজ করে ডিএনসিসি। এতে মেলাথিওন নামের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ওষুধটি ৫৭ ইসি হিসেবে আমদানি হয়। পরবর্তী সময়ে পরীক্ষাগারে একে ৫ ভাগ হিসেবে ডিজেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফগার যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়; যদিও এই পদ্ধতি খুব বেশি কার্যকর নয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান বলেন, লার্ভিসাইডিংয়ে টেমিফস, ম্যালেরিয়া ওয়েল-বি ও নোভালিউরন ট্যাবলেট যথেষ্ট কার্যকর। অন্যদিকে, ফগিংয়ের কার্যকর মেলাথিওন। তারপরও মেয়র হয়তো একটি ধারণা পেয়েছেন যে দু-তিন বছর পরপর ওষুধ পরিবর্তন করা দরকার। তাঁরাও এমনটা মনে করেন। কেননা, মশারও প্রতিরোধক্ষমতার উন্নতি হতে পারে। তখন ওষুধের পরিবর্তন করা প্রয়োজন। মেয়র দেশে ফিরলে ওষুধে পরিবর্তন আনতে চান কি না, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।